সিঙ্গাপুরে বৈধ পথে ২৮ হাজার ডলার নিয়েছে সামিট

Post Image

সিঙ্গাপুরে শীর্ষ ধনীর তালিকায় নাম এসেছে বাংলাদেশের সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান ও তার পরিবারের। ফোর্বস ম্যাগাজিন জানিয়েছে, গত জুলাই পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ কোটি ডলার।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে শেয়ার বিজ জানিয়েছে, সামিট গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত বৈধভাবে মাত্র ২৮ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার নিয়েছে সিঙ্গাপুরে। সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই) নামে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলতে বাংলাদেশ থেকে ওই অর্থ নেওয়া হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

সিঙ্গাপুরের আজিজ খানের সম্পদের পরিমাণ নিয়ে ফোর্বস ম্যাগাজিন তথ্য প্রকাশের পরে খোঁজ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, এসপিআই ২৮ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার বাংলাদেশ থেকে নিয়েছে অনুমতি নিয়ে, যা স্থানীয় মুদ্রায় সর্বোচ্চ ১৭ লাখ আট হাজার টাকা (প্রতি সিঙ্গাপুরি ডলার ৬১ টাকা হিসাবে)। কিন্তু ফোর্বসের মতে, সিঙ্গাপুরে আজিজ খান ও তার পরিবারের বর্তমান সম্পদ ৯১ কোটি মার্কিন ডলার দেখিয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা দাঁড়ায় সাত হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা (প্রতি মার্কিন ডলার ৮৪ টাকা হিসাবে)।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সিঙ্গাপুরে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খোলার জন্য সামিট গ্রুপ বাংলাদেশ থেকে ২৭ হাজারের কিছু বেশি ডলার সেখানে নিয়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে। এর বাইরে কোনো অর্থ নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো অনুমতি দেয়নি।’

ফোর্বস ম্যাগাজিন জানিয়েছে, এ পরিমাণ সম্পদ নিয়ে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় আজিজ খানের নাম স্থান পেয়েছে ৩৪ নম্বরে। এসপিআইর সিঙ্গাপুর হেডকোয়ার্টারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে আছেন আজিজ খানের মেয়ে আয়েশা আজিজ খান। আজিজ খান ও তার ভাই সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান ছাড়াও তাদের আরেক ভাই জাফর উমেদ খানও এ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আছেন।

জানা গেছে, আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য অর্থ নিতে পারে না কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশিদের বিদেশি বিনিয়োগ করার নীতিমালা করতে এখন পর্যন্ত খসড়া তৈরি হয়েছে মাত্র। কিন্তু চাহিদার ভিত্তিতে বর্তমানে কেস-টু-কেস যাচাই করে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দিয়েছে।

এছাড়া রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে দেশের বাইরে লিয়াজোঁ বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খুলতে পারেন। এর ব্যয় নির্বাহের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব থেকে বছরে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ডলার নিতে পারেন।
সম্প্রতি সামিট গ্রুপ সিঙ্গাপুরের একটি শিপইয়ার্ডে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ থেকে অর্থ নিতে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে। কিন্তু এ আবেদনটি এখনও অনুমোদন পায়নি। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকও কোনো অর্থ ছাড় করেনি।

ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তালিকার বিষয়ে আজিজ খান বলেন, ‘আমাদের সব বিনিয়োগ বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বিনিয়োগ মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দিয়েছে ফোর্বস। ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, এলএনজি আমদানি, সংরক্ষণ ও বিতরণ খাতে আরও দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা।’

জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রথমে ট্রেডিং কোম্পানি হিসেবে ব্যবসা শুরু করে সামিট। পরবর্তী সময়ে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিকস, কমিউনিকেশনস, হসপিটালিটি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, রিয়েল এস্টেট খাতে ব্যবসা করছে সামিট গ্রুপ। সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার লিমিটেড (এসপিএল) ও সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি।